বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

 জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। তিনি আমাদের স্বাধীনতার প্রতিক। মুক্তির দিশারী। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে কখনো বিচ্ছিন্ন করে ভাবা যায় না। তিনি ছিলেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান কান্ডারি।

বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
তার ডাকে আমরা যুদ্ধে গেছি।তার নামে আমরা যুদ্ধ করেছি। স্বাধীন বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের এক মহান নায়ক তিনি। বাঙালি জাতীয়তাবাদ এর শ্রেষ্ঠতম প্রবক্তা। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস ও সংগ্রাম তিনি নিজের চেতনায় লালন করেছেন।

সূচিপত্রঃবঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন 

প্রিয় পাঠক আমরা জানবো বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন। বঙ্গবন্ধুর কারাজীবন ,যেভাবে বঙ্গবন্ধু উপাধি পায়, বঙ্গবন্ধুর উক্তি,মুক্তিযুদ্ধে অন্যান্য বাহিনী, মুক্তিযুদ্ধের খেতাব ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করব হয়ে হার আদালতে।

বঙ্গবন্ধু

জন্মঃ ১৭ মার্চ, ১৯২০(মঙ্গলবার)।বাংলাঃ ০৪ চৈত্র, ১৩২৬ সাল। জেলাঃ ফরিদপুর,মহকুমা গোপালগঞ্জ মধুমতি নদীর তীরে। ডাক নাম খোকা। পিতাঃ শেখ লুৎফর রহমান। মাতাঃ সায়েরা খাতুন। স্ত্রীঃ শেখ ফজিলাতুন্নেছা। বঙ্গবন্ধু শহীদ হন ইংরেজিঃ ১৫ ই আগস্ট ১৯৭৫ সাল শুক্রবার।

রাজনৈতিক জীবন

১৯৩৮ সালে কৃষি (মেলা উদ্বোধনে) মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক শ্রম বাণিজ্য ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী গোপালগঞ্জ যান। সেখানে স্কুলের ছাত্রাবাস (গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুল-মিশন স্কুল) সংস্কারের দাবি জানান। ১৯৩৯ সালে মুসলিম ছাত্রলীগের যোগ দেন। এক বছরের জন্য কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ১৯৪৩ সালে মুসলিম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন এবং সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৪৫ সালে ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস নির্বাচিত হন।

১৯৪৮ সালের ৪ই জানুয়ারির ফজলুল হক মিলনায়তনে নাজমুল করিমের সভাপতিত্তে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৯ সালে ২৩ জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করেন এবং যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে দলে সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৫৩ সালের ৪ই ডিসেম্বর প্রথম সাধারণ নির্বাচনের সব বিরোধী দল মিলে যুক্তফ্রন্ট গঠন করেন।

১৯৫৪ সালের ১০ই মার্চ সাধারণ নির্বাচনে ২৩৭ টি আসনের মধ্যে যুক্ত ফ্রন্ট ২২৩ টি আসনে বিজয়ী হন। বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জের আসনে বিজয়ী হন। বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জের রাসায়নিক বিজয়ী হন। ১৯৫৪ সালের ১৪ মে বঙ্গবন্ধু যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভায় কৃষি,ঋণ,সমবায় ও পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক এবং সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ১৯৫৫ সালের ৫ই জুন বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলগুলোর জাতীয় সম্মেলনে চৌধুরী মোঃ আলীর বাসভবনে ঐতিহাসিক ছয় দফা পেশ করেন। ১৯৬৬ সালের ১ মার্চ দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭০ এর নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্থাৎ ১৯৬৯ আসনের মধ্যে ১৬৭ আসন লাভের মাধ্যমে পুরো পাকিস্তান থেকে সমগ্র পাকিস্তানে নেতৃত্বে হয়ে ওঠেন। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু তৎকালীন রেসকোর্স (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ময়দানে এক যুগান্তকারী ভাষনে ঘোষণা করেন।

"এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম"। বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণে স্পষ্ট হয়ে যায় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাত শেষে অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭২ সালের ১২ই জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।

বঙ্গবন্ধুর কারাজীবন

বঙ্গবন্ধু ৪৬৬২ দিন কারাগারে ছিলেন। বঙ্গবন্ধু মোট ২১ বার গ্রেফতার হন ।স্কুলের ছাত্র অবস্থায় ব্রিটিশ আমলে ৭দিন।৪ হাজার ৬৭৫ দিন পাকিস্তান সরকারের আমলে। জীবনে ১৪ বছর তিনি কারাগারে কাটান। ১৯৩৮ সালে প্রথম কারাগারে যান । ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ থেকে ১৫ই মার্চ(৫ দিন)। ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৪৮ থেকে ২১ শে জানুয়ারি ১৯৪৯(১৩২ দিন)।

১৯ এপ্রিল ১৯৪৯ থেকে ২৮ জুন ১৯৪৯(৮০ দিন)। সেপ্টেম্বর ১৯৪৯ - (২৭ দিন)। ১৯৮৯ সালে ২৫ শে অক্টোবর থেকে ২৭ ডিসেম্বর (৬৩ দিন)। ১৯৫০ সালের ১লা জানুয়ারি -১৯৫২ সালের ২৬ শে ফেব্রুয়ারি (৭৮৭ দিন)। নির্বাচনে জয় লাভ করে (২০৬ দিন)। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান কর্তৃক ১১ অক্টোবর গ্রেফতার( ১১৫৩ দিনে একটানা সবচেয়ে বেশি ৩ বছরে বেশি সময়) ১৯৬২ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ১৮ই জুন(১৫৮ দিন)।

১৯৬৪ ও ৬৫ সালে (৬৬৫ দিন বিভিন্ন মেয়াদে) ছয় দফার পর ৩২ টি জনসভা (৯০ দিন)। ১৯৬৬ সালের ৮ মে থেকে ১৯৬৯ এর ২২ ফেব্রুয়ারি (এক হাজার ২১ দিন)। ১৯৭১ এর ২৬ মার্চ প্রথম প্রহর ২৮৮দিন(স্বাধীনতা ঘোষণার পর)।

যেভাবে বঙ্গবন্ধু উপাধি পায়

১৯৬৮ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার অভিযোগ আনে, শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে কয়েকজন রাজনৈতিক, সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা এবং গুটি কয়েক সৈনিক সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পূর্ব বাংলাকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ষড়যন্ত্র লিপ্ত ছিলেন। এই মিথ্যা মামলায় শেখ মুজিবুর রহমান সহ মোট ৩৫ জনকে আসামি করা হয়।

৩৫ জন আসামির সবাইকে পাকিস্তানি সরকার গ্রেফতার করে। মিথ্যা মামলায় শেখ মুজিবুর রহমানকে সাজা দেওয়ার পরিকল্পনাটি পেয়ে বাঙালি জাতি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং স্বৈরাচারী আইয়ুবের বিরুদ্ধে গণপতি রোধ গড়ে তোলে। ছাত্র জনতার মিছিলের রাজপথ উত্তাল হয়ে ওঠে। গণ আন্দোলনে নতিস্বীকার করে আইয়ুব খান। ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে শেখ মুজিবুর রহমানসহ অভিযুক্তসহ আসামিকে মুক্তি প্রদানের ঘোষণা দেন।

২৩ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে রমনা রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বিশাল গণ সংবর্ধনার আয়োজন করা হয় এবং ওই সভায় তৎকালীন ডাকসুর সভাপতি, বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ সহচর তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবুর রহমানকে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধিতে ভূষিত করেন।

যেভাবে জাতির জনক উপাধি পায়

তিন মার্চ ১৯৭১ সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আয়োজনে ঢাকার পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত জনসভায় ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শাহাজান সিরাজ গঠিত স্বাধীনতার ইস্তেহার স্বাধীন বাংলাদেশের 'জাতির জনক হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম ঘোষণা করেন।

বঙ্গবন্ধুর উক্তি

১৯৭১ সালের উত্তল মার্চের দিনগুলোতে এক প্রেস কনফারেন্স বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দৃঢ় কন্ঠে এই অগ্নিঝরা কথাগুলো বলেছিলেন।আগুন নিয়ে খেলা করা কারো উচিত নয়। কেউ সাত কোটি মানুষের ইচ্ছাকে দাবায় রাখতে পারে না। যখন সাত কোটি মানুষ কোন কিছু অর্জনের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়, পৃথিবীর কেউ তাদের দমিয়ে রাখতে পারে না। আজ হোক ,কাল হোক আর পরশু হোক জয় আমাদেরই।

এই স্বাধীনতা তখনই আমার কাছে প্রকৃত স্বাধীনতা হয়ে উঠবে যেদিন বাংলার কৃষক-মজুর ও দুঃখী মানুষের সকল দুঃখের অবসান হবে। সংস্কৃতি স্বাধীনতা ছাড়া রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্থহীন তাই মাটি ও মানুষকে কেন্দ্র করে গণ মানুষের সুখ শান্তি ও স্বপ্ন এবং আশা-আকাঙ্ক্ষাকে অবলম্বন করে কর উঠবে বাংলার নিজস্ব সাহিত্য- সংস্কৃতি।

এই স্বাধীনতা আমার ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি আমার বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না খায়। এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মা-বোনেরা কাপড় না পাই। আর সাম্প্রদায়িকতা যেন মাথা ঝরা দিয়ে উঠতে না পারে। ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র বাংলাদেশ মুসলমান তার ধর্ম কর্ম করবে। হিন্দু তার ধর্ম কর্ম করবে। কেউ কাউকে বাধা দিতে পারবে না।

মুক্তিযুদ্ধে অন্যান্য বাহিনী

শেখ ফজলুল হক মনি (সমন্বয়কারী পূর্বাঞ্চল ),সিরাজুল আলম খান (সমন্বয়কারী উত্তরাঞ্চল) আব্দুর রাজ্জাক (সমন্বয়কারী পশ্চিমাঞ্চল) তোফায়েল আহমেদ (সমন্বয়কারী দক্ষিণাঞ্চল) মুজিব বাহিনীভাবে বি এল এফ, বি এল এফ এর পূর্ণরূপ হলোঃ'Bangladesh Liberation Front' একে মুজিব বাহিনী ও বলা হয়।

এই বাহিনী গঠিত হয়েছিল আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নির্দিষ্ট ভাবে বাছাই করা কিছু তরুণ ও যুবককে নিয়ে। মুজিব বাহিনীর প্রশিক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন ভারতীয় বাহিনীর মেজর জেনারেল ওবান। বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ প্রদানের পর এই বাহিনী দেশের অভ্যন্তরের যুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে। মুজিব বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ছিল প্রায় ৫ হাজার।

মুক্তিযুদ্ধের খেতাব

স্বাধীনতা যুদ্ধকালে বা পরবর্তী সময় বিভিন্ন ইউনিট, সেক্টর, ব্রিগেড থেকে পাওয়া খেতাবের জন্য সুপারিশ সমূহের ভাইস মার্শাল একে খন্দকারের নেতৃত্বে একটি কমিটি দ্বারা নিরীক্ষা করা হয়। এরপর ১৯৭৩ সালে ১৪ই ডিসেম্বর প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে খেতাব তালিকায় স্বাক্ষর করেন। ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর পূর্বে নির্বাচিত সকল মুক্তিযোদ্ধার নাম সহ মোট ৬৭৬ জন মুক্তিযোদ্ধাকে নিম্নোক্ত খেতাব প্রদান করা হয়।

বীরত্বসূচক উপাধি প্রদানঃ ১। বীরশ্রেষ্ঠ ৭ জন,২। বীর উত্তম ৬৮ জন,৩। বীর বিক্রম ১৭৫ জন, বীরপ্রতীক ৪২৬ জন।
বিদেশি বন্ধুদের প্রদত্ত সম্মাননাঃ১। বাংলাদেশ স্বাধীনতার সম্মাননা একজন (ইন্দিরা গান্ধীকে)২। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা-১৫জন.৩। বাংলাদেশ মৈত্রী সম্মাননা-৩১৩ জন ১১ টি সংগঠন।
বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মহিলাঃ১। ক্যাপ্টেন ডা. সেতারা বেগম বীর প্রতীক(২ নং সেক্টর)2. তারামন বিবি বীর প্রতীক( ১১ নং সেক্টর)।

শেষের অংশ

প্রিয় পাঠক, উপযুক্ত বিষয়গুলোতে আমরা জেনেছি। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে। পুরোটা পড়ে থাকলে অবশ্যই উপকৃত হবেন। এখানে বঙ্গবন্ধুর সম্পর্কে, বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন জীবন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url